সড়কে মাছ ধরাই যেন নিয়তি শ্রীপুর বাসীর (ভিডিও)

Voice of Dhaka
আপডেটঃ এপ্রিল ৩০, ২০১৮ | ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ                             ই-প্রিন্ট ই-প্রিন্ট
Voice of Dhaka
আপডেটঃ এপ্রিল ৩০, ২০১৮ | ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ                             ই-প্রিন্ট ই-প্রিন্ট
Link Copied!

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাঙ্গাচোরা সংযোগ সড়কগুলোই এখন অন্যতম জনদুর্ভোগের কারণ। এটাই যেন গত কয়েক বছরের সাধারণের মানুষের নিয়তি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের গাফিলতি, দূর্নীতি, অবহেলা, নির্মাণ কাজে নি¤œমানের কাঁচামাল ব্যবহার, সঠিকভাবে নিয়মিত সংস্কার না হওয়া, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে সড়ক নির্মাণ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের দীর্ঘসূত্রিতা, সড়কে শিল্পকারখানার ভারী যানবাহন চলাচল ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণেই দুর্ভোগ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল তো দূরে থাক, পায়ে হাঁটাও দায় হয়ে পড়েছে। তবুও ঝুঁকি নিয়েও কয়েকবছর ধরে এলাকাবাসীদের এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ স্থানীয়দের। সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হওয়ায় বিভিন্ন শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রাস্তার দুরাবস্থার কারন দেখিয়ে পরিবহন ভাড়াও বেড়েছে কয়েকগুন।

স্থানীয় সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, উপজেলায় পাকা সড়ক আছে ১৮৫ কিলোমিটার , আধাপাকা সড়ক রয়েছে ১১২ কিলেমিটার এছাড়াও গ্রামীন সড়ক রয়েছে ১২১৩ কিলোমিটার। উন্নয়ন কাজ চলমান আছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়কের। এসব সড়ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কয়েকশ শিল্প কারখানা। শিল্পকারখানার ভারী যানবাহনের কারনে উপজেলার অধিকাংশ সড়কের অবস্থা খারাপ হয়েছে। এছাড়াও জনদুর্ভোগ লাগবে ইতিমধ্যে শ্রীপুর-বরমী সড়ক সহ কয়েকটি সড়কের দরপত্র অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে এছাড়াও জৈনাবাজার-শৈলাট সড়ক ও মাওনা-ফুলবাড়িয়া –কালিয়াকৈর সড়ক, গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ি-শ্রীপুর সড়ক,এমসিবাজার- শিশু পল্লী সড়ক,শ্রীপুর-আবদার সড়ক, শ্রীপুর –রাজাবাড়ি সড়কের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যার দরপত্র পক্রিয়া শিগ্রই আহবান করা যাবে।

শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়ন ও কাওরাইদ ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে যাতায়াত করতে শ্রীপুর-বরমী সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন। তাছাড়া ময়মনসিংহের গফরগাঁও, পাগলা, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা, নরসিংদী জেলার লাখো জনসাধারণ সহজ যোগাযোগের জন্য এসড়কটি ব্যবহার করে থাকেন। গত তিন বছর ধরে এই সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী। যদিও গত বছরের নভেম্বর মাসে এই সড়কের দরপত্র অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের মার্চ মাসে। কিন্তু কাজের ঢিলেঢালা ভাব সাধারন মানুষের ক্ষোভের কারন হয়ে দাড়িয়েছে।

অপরদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা মাওনা-ফুলবাড়ীয়া-কালিয়াকৈর ৪০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মাওনা চৌরাস্তা থেকে সলিংমোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গা চোরা সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বিকল হয়ে এ অংশে দীর্ঘসময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও যাত্রী সাধারনের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অপর একটি সড়ক জৈনাবাজার- শৈলাট- সখিপুর সড়ক। এই সড়কটির জৈনাবাজার থেকে শৈলাট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য। শিল্পকারখানার পন্য পরিবহনের গাড়ী দীর্ঘ সময় বিকল হয়ে আটকে থাকে এ সড়কে। সাথে রয়েছে জনসাধারনের ভোগান্তি।

বরমী বাজার মালিক সমিতির ওয়াহিদুল হক ভূঁইয়া জানান, শ্রীপুর-বরমী প্রধান সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় ব্যবসা বাণিজ্যের খুব অসুবিধা তৈরী হয়েছে। বিকল্প সড়কও খানাখন্দে ভরপুর থাকায় পরিবহন ভাড়া এখন দ্বিগুন গুনতে হচ্ছে। এতে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।

মাওনা চৌরাস্তা বণিক সমিতি সভাপতি এড. আশরাফুল ইসলাম রতন জানান, দীর্ঘদিন মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কের অবস্থা বেহাল। নির্ধারিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরী হচ্ছে। এতে সড়কের পিচ উঠে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই সড়কে যাতায়াতকারীসহ ব্যবসায়ীদের ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে। জনদুর্ভোগ লাগবে দ্রুত সড়কটিতে আর.সি.সি ঢালাই দিয়ে পূণনির্মাণের দাবি করেন তিনি।

মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এড. হারুণ অর রশিদ ফরিদ জানান, সড়ক বেহাল থাকায় সবচাইতে বেশি ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ভাঙ্গা সড়কে যানবাহনের ধীর গতি থাকায় সৃষ্ট যানজটে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। আবার অনেকে সড়কের অজুহাতে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।

নগরহাওলা গ্রামের তরুন উদ্যোক্তা মাজাহারুল ইসলাম সোহাগের মতে,শিল্পএলাকা সমৃদ্ধ শ্রীপুরের সড়কগুলো ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য পরিকল্পনা না করে এসব সড়ক পাকা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সড়ক অল্পদিনেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়। এতে জনদুর্ভোগ যেমন বাড়ে তেমন আবার সরকারের অর্থের অপচয় হয়। তাই সরকারের অর্থ ব্যয় বাঁচাতে এখনই সুনির্দ্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজের দাবী জানান।

বরমী সড়কের দুর্ভোগের বিষয়টি সামনে এনে শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুজায়েত হোসেন বলেন, দুই বছর আগে রাস্তাটি সংস্কার কাজ শুরু করে রেল লাইনের পূর্ব পর্যন্ত সম্পন্ন করা হলে এ প্রজেক্টের অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক প্রকল্প পরিদর্শন আসেন। এলাকাটি শিল্প সমৃদ্ধ হওয়ায় এই রাস্তায় স্বাভাবিকের তুলনায় অতি ভারি যানবাহন বেশি চলাচল করে। এ বিষয়টি মাথায় নিয়ে পূর্বে চলমান কাজ বন্ধ রেখে রাস্তা সংস্কারে নতুন নির্দেশনা দেন তারা। তাদের পরামর্শে ইউ.এম.এম যেখানে ছিলো ৩ ইঞ্চি সেখানে নতুন সংস্করণে ১০ ইঞ্চি দেওয়া হবে। কার্পেটিং পূর্বের পরিকল্পনায় ছিল ৪০মিলিমিটার কিন্তু নতুন সংস্করণে তা বাড়িয়ে ১০০মিলিমিটার করা হবে। নতুন এই কাজের জন্য সময় একটু বেশী অতিবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও জনদূর্ভোগ লাগবে অন্যান্য সড়কের কাজ চলমান আছে।

গাজীপুর সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ডিএম নাহিন রেজা জানান, জনদুুর্ভোগ লাগবে বর্তমান সরকার সারা দেশেই ব্যাপক কর্মকান্ড গ্রহন করেছেন।এরই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরের শ্রীপুরের বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মাওনা- কালিয়াকৈর সড়কের তিন কিলোমিটার অংশের সাময়িক সংস্কার শুরু হয়েছে। পুরো সড়কের দরপত্র আহবান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উপজেলার সকল সড়কগুলোর পুরো কাজ শেষ করতে আগামী বছরের অর্ধেক সময় লেগে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

ট্যাগ: