ভিআইপি মামলা, ভিআইপি চাঁদাবাজি

Voice of Dhaka
আপডেটঃ নভেম্বর ৩০, ২০২৪ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ                             ই-প্রিন্ট ই-প্রিন্ট
Voice of Dhaka
আপডেটঃ নভেম্বর ৩০, ২০২৪ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ                             ই-প্রিন্ট ই-প্রিন্ট
Link Copied!

ডেস্ক রিপোর্ট : জুলাই বিপ্লব ও ৫ আগস্টের পর সারা দেশে সহিংসতার ঘটনায় ২ হাজার ৫০০ মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিগত শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আমলাসহ ভিআইপিদের আসামি করা হয়েছে। ভিআইপি ছাড়াও সব মামলায় শতাধিক আসামি। যাকে ইচ্ছা তাকেই মামলায় আসামি করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ভিআইপি ছাড়া অন্য আসামিদের কাউকেই চেনেন না মামলার বাদী। মামলাগুলোর নেপথ্যে যারা রয়েছেন তারা বাদীকে সামনে রেখে এখন সারা দেশে ভিআইপি চাঁদাবাজি শুরু করেছেন। রাজধানীর গুলশান থানার এক মামলা থেকে তিনজনের নাম বাদ দেওয়ার জন্য ৬ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৫ আগস্টের পর ঢাকাসহ সারা দেশে দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সরকারের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত আমলা, ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক-বর্তমান সদস্যদের আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গত তিন মাসে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৫ পুলিশসহ ১১০ ভিআইপিকে। এ ছাড়া আরও প্রায় ১৫ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নভেম্বরেও গ্রেপ্তারের সংখ্যা কম নয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সহিংসতার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদসহ শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এসব মামলা এবং ছাত্র-জনতার জনরোষ থেকে নিজেদের বাঁচাতে অনেকে আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ দেশ ছাড়েন। তবে যারা দেশে আছেন এদের মধ্যে অনেক ভিআইপিসহ পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের বিভিন্ন মামলায় দফায় দফায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রিমান্ডে তারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে চরমভাবে অপব্যবহারের কথাও স্বীকার করেছেন।
হত্যা মামলার পাশাপাশি বিগত সরকারের অপকর্ম ও দুর্নীতিসহ নানা বিষয়েও তারা তথ্য দিয়েছেন বলে জানা যায়। এ ছাড়া পলাতক পুলিশ সদস্য ও আওয়ামী লীগের ভিআইপিসহ অসংখ্য নেতাকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের নামে রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে একাধিক মামলা রয়েছে।
জানা যায়, মোটা অঙ্কের অথবা ভিআইপি চাঁদাবাজি করার জন্য বিভিন্ন মামলায় অনেক ব্যবসায়ী, বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে এসব ভিআইপিকে কাছ থেকে বাদীর মাধ্যমে বা অন্য মাধ্যমে মামলা থেকে নাম বাদ দিতে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। হয়রানি থেকে বাঁচতে অনেকে টাকা দিয়ে আপদমুক্ত হচ্ছেন। আবার কেউবা দামদর করে টাকা দিচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রকৃত আসামিদের তথ্য সংগ্রহ করে বা ভিডিও ফুটেজ দেখে আইনের আওতায় আনা হোক। অন্য কাউকে যেন হয়রানির শিকার না হতে হয়।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দায়ের করা মামলাগুলো যথাযথভাবে তদন্ত করতে হবে। কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। নিরীহ কারও নামে মামলা হলেও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেছেন, আমাদের কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে যে, মামলায় যারা প্রকৃত অর্থে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে অযথা হয়রানি করা হবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এই আন্দোলন দমনের জন্য দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার ওপর ধ্বংসাত্মক হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছাত্র-জনতার ওপর মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হতাহত করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটি জানিয়েছে, আন্দোলনে প্রায় ১ হাজার ৫৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া ৩১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের জোট শরিক দলের নেতা-কর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসংখ্য সদস্যের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে একাধিক মামলা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে অসংখ্য মামলা হয়েছে। এসব মামলায় জড়িতদের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিদিনই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ভিআইপিসহ অনেক পুলিশ সদস্যও রয়েছে। এখনো যারা ধরা পড়েনি, তাদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। র‌্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় করা মামলায় নিজস্ব ও যৌথ বাহিনীর অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভিআইপিসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাগুলো যাচাইবাছাই করে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

ট্যাগ: