টেকনাফে শিশু অস্ত্রসহ কারাগারে : এলাকাবাসীর দাবি ষড়যন্ত্রের শিকার

Voice of Dhaka
আপডেটঃ নভেম্বর ৩০, ২০২৪ | ১১:৪৯ অপরাহ্ণ                             ই-প্রিন্ট ই-প্রিন্ট
Voice of Dhaka
আপডেটঃ নভেম্বর ৩০, ২০২৪ | ১১:৪৯ অপরাহ্ণ                             ই-প্রিন্ট ই-প্রিন্ট
Link Copied!

মুহাম্মদ ইউনুছ অভি, টেকনাফ, কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজার টেকনাফে বাবাকে না পেয়ে ১৪ বছরের এক ছাত্রকে ঘুম থেকে ধরে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অস্ত্র উদ্ধারের স্বীকারোক্তি নেওয়া ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় জনমনে সমালোচনার ঝড় চলছে। ‘টেকনাফ প্রদীপ যুগে ফিরছে’ বলে নিজস্ব ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
এদিকে, গত ২৬ নভেম্বর রাফিকে আটকের ঘটনা সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হলে ৪ দিন পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃত ওই স্কুলছাত্র টেকনাফ হ্নীলা দরগাহপাড়া এলাকার রেজাউল করিমের ছেলে। সে হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র এবং তার বাবা একজন জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য।
পুলিশের দাবি, গত ২৬ নভেম্বর ভোরে টেকনাফ হ্নীলা দরগাহপাড়া সাকিনের নুরুল আমিনের বাড়ির সামনে টেকনাফ থানার ওসি গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে পালানোর চেষ্টাকালে স্কুল ছাত্র রাফিকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছে থাকা নীল রংয়ের শপিং ব্যাগ থেকে বিদেশি অস্ত্র পাওয়া যায়।
তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, ‘একজন স্কুল পড়ুয়া সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রকে আমাদের চোখের সামনেই আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। আটককৃত শিশুটির বাড়িতে তল্লাশী করে কিছুই পায়নি। তবে ওই সময় অস্ত্রগুলো প্রবাসী নুরুল আমিনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এবং ওই অস্ত্র রাফির কাছ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশের এমন বক্তব্যে আমরা বাকরুদ্ধ হই। তখন ১৪ বছরের শিশুটি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে হাউ মাউ করে কান্না করছে। পরে অস্ত্রগুলো তার বাবার বলে রাফির কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেয় পুলিশ।’
অন্যদিকে পুলিশের মামলায়, গত ২৬ নভেম্বর ভোর রাত তিনটা ৪০ মিনিটের দিকে পুলিশের কাছে খবর আসে যে, হ্নীলার দরগাহপাড়ার নুরুল আমিনের বাড়ির সামনে রাস্তার উপর দুইজন কতিপয় ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্য অবস্থান করছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দুইজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে একজনকে তার হাতে থাকা নীল রঙের শপিং ব্যাগসহ আটক করে। তার শপিং ব্যাগে কি আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাগে অস্ত্র ও গুলি আছে। সাক্ষীদের সামনে ব্যাগ তল্লাশি করে পাওয়া যায় একটি কালো রঙের বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি এবং ৪০ রাউন্ড নীল রঙের কার্তুজ। উক্ত মামলায় তিনজনকে সাক্ষী করা হয়েছে, স্থানীয় নারী ও মৌলভী এবং আরেকজন পুলিশ সদস্য।
মামলার সাক্ষী প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী সুফাইদা আক্তার বলেন, “গত ২৬ নভেম্বর ভোর রাতে আমার বাড়িতে পুলিশ প্রবেশ করে। কোনো কথা না বলে ঘরের আলমারি খুলে তল্লাশি করতে থাকে। এক পর্যায়ে আলমারি থেকে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর পুলিশ চলে যাওয়ার পথে রাফিকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়।”
আরেক সাক্ষী মৌলভী জামাল হোসাইন জানান, ‘ভোরে মসজিদের ফজর নামাজে যাওয়ার সময় নিজেকে ওসি পরিচয় দিয়ে আমাকে দাঁড় করান। ওই সময় তাউসিফুল করিমকে তার বাড়ি থেকে নিরস্ত্র অবস্থায় বের করে আনতে দেখি। এসময় ওসি অস্ত্রসহ শিশুটিকে আটক করার কথা বলে সাদা কাগজে আমাকে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু আমি অপারগতা জানালে ধমক দেন ওসি। এটা যে মামলার সাক্ষী আমি জানি না। আর অস্ত্রগুলো শিশুর কাছ থেকে পেয়েছে, আমি দেখেনি।’
রাফির বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘মূলত রাজনৈতিক এবং নির্বাচন নিয়ে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমাকে না পেয়ে আমার শিশু পুত্রকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে। আমার ছেলে খুবই মেধাবি। সে তিন বার বৃত্তি পেয়েছে। চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় আমার ছেলে অংশ নিতে পারল না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার ছেলের কাছ থেকে জোর করে অস্ত্র উদ্ধারের স্বীকারুক্তি নেয় পুলিশ। কিন্তু অপরাধ ঢাকতে পুলিশ আবার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায় বর্তমান সরকারের কাছে তদন্তপূর্বক মামলা প্রত্যাহার ও তার মুক্তি দাবি করছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম জানান, আমার স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর তাউসিফুল করিম রাফি একজন নিয়মিত ছাত্র। সে খুব মেধাবী ছিল। এখন তার পরীক্ষা চলছে, তাই ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের দাবি, ঘটনার দিন ভোরে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরে তার হাতে থাকা একটি নীল রংয়ের শপিং ব্যাগের ভেতর একটি বিদেশি পিস্তল, ছয়টি গুলি এবং ৪০টি নীল রংয়ের কার্তুজ পাওয়া যায়। পরে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তা জব্দ করা হয়। পুলিশের স্বীকারুক্তি ভিডিও কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।”
জানতে চাইলে কক্সবাজার পুলিশ সুপার মোঃ রহমত উল্লাহ জানান, ‘পুলিশ তার হাতে থাকা শপিং ব্যাগ তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র, গুলি উদ্ধার করেছে। এখন এসে পরিবারের পক্ষ থেকে যে বিষয়টি দাবি করেছে সেটি তাদের ব্যক্তিগত মতামত। তবে ঘটনাটি এড়িয়ে যাচ্ছি না আমাদের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে।

ট্যাগ: