চরের মানুষের কপাল খুললো শুকনো মরিচ

Voice of Dhaka
আপডেটঃ অক্টোবর ১২, ২০২৪ | ১১:৩৪ অপরাহ্ণ                             ই-প্রিন্ট ই-প্রিন্ট
Voice of Dhaka
আপডেটঃ অক্টোবর ১২, ২০২৪ | ১১:৩৪ অপরাহ্ণ                             ই-প্রিন্ট ই-প্রিন্ট
Link Copied!

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার ৭ উপজেলার মধ্যে সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় ১৬৫টি চর ও দ্বীপ চর রয়েছে। এসব চরাঞ্চলের মাটি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। চলতি মৌসুমে গাইবান্ধার চরাঞ্চলের কৃষকগণ ২ শত কোটির অধিক টাকার শুকনো (লাল) মরিচ বিক্রয় করার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফুলছড়ি উপজেলা ভাগ হয়েছে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রে। সমতল ও চরাঞ্চলের জনজীবনের বেশ পার্থক্য রয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষের কেনাকাটা মূলত হাটনির্ভর। চরের মানুষের জনপ্রিয় ফুলছড়ির হাট। ফুলছড়ির চরাঞ্চলে যা উৎপাদিত হয়, তার একটি বড় অংশ বিক্রয় হয় এ হাটে। গাইবান্ধার এ হাটের অন্যতম পণ্য শুকনো (লাল) মরিচ। সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার দুই দিন বসে ফুলছড়ি হাট। কাকডাকা ভোর থেকে হাটে আসা শুরু হয় লাল টুকটুকে মরিচ। নৌকা আর ঘোড়ার গাড়িতে করে গাইবান্ধার ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা এবং জামালপুর জেলার বিভিন্ন চর থেকে মরিচ বিক্রয় করতে আসে কৃষক ও পাইকাররা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় হাঁকডাক। বাড়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার ব্যস্ততা। দুপুর পর্যন্ত চলে এ হাট। এরপর বস্তা বোঝাই করে লাল মরিচ যায় দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে।

ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারি গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, প্রতি বিঘা মরিচ উৎপাদনে খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। বিঘায় কাঁচা মরিচ ৫০ মণ হলে তা রোদে শুকানোর পর ৯-১০ মণ হয়। প্রতিমণ শুকনা মরিচ ১২-১৩ হাজার টাকায় বিক্রয় করা হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকে। গাইবান্ধার শুকনা (লাল) মরিচের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। এর অন্যতম কারণ মরিচের আকার ও স্বাদ। ব্রহ্মপুত্র, তিস্ত, যমুনা ও করতোয়া বেষ্টিত চরগুলোয় মরিচের ফলনও বেশি।

সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরেই চরের পলি মাটিতে রোপণ করা হয় মরিচের চারা। চরাঞ্চলের লাল মরিচ চরের মানুষের কাছে লাল সোনা নামে পরিচিত। চরাঞ্চলের কৃষকদের ফলানো মরিচ নিতে পাইকারের ভিড় কম নয়। বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা ফুলছড়ি হাটে আসে। তবে এখান থেকে বেশি মরিচ কেনেন ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। বগুড়া থেকে ফুলছড়ি হাটে মরিচ ক্রয় করতে আসা আব্দুর রহিম বলেন, এখানকার মরিচের মানটা অনেক ভালো। তবে দাম একটু বেশি। ভোর বেলায় ট্রাক নিয়ে এসেছি হাটে মরিচ ক্রয় করার জন্য।

বরিশাল থেকে মরিচ ক্রয় আসা মোতাহার হোসেন বলেন, এ হাটে থেকে ৭০-৮০ মণ মরিচ ক্রয় নিয়ে যান। স্থানীয় কিছু হাটে পাইকারি বিক্রয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানির নিকট বিক্রয় করা হয়। ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত পুরাতন উপজেলা হেডকোয়ার্টার্স মাঠে ২০০২ সাল থেকে বসে মরিচের হাট। ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি থেকে মে মাস পর্যন্ত ভরা মৌসুমে মরিচ বেশি বিক্রয় হয়। অন্যান্য সময়ে বেচাবিক্রি কম হয়। ফুলছড়ি হাটের ইজারাদার বজলুর রহমান বলেন, প্রতি হাটে শুধু চরাঞ্চলের শুকনা লাল মরিচ কোটি টাকার ওপরে বিক্রয় হয়। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, আবহাওয়া ও মাটি উর্বর হওয়ায় চরাঞ্চলে দিন দিন মরিচ চাষের পরিমাণ বাড়ছে। চরের লোকজনও মরিচ চাষে ঝুঁকছেন এবং মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

ট্যাগ: